‘মন্দের ভালো’ চুক্তিতে জলবায়ু সম্মেলনের সমাপ্তি

যে প্রত্যাশা নিয়ে শুরুটা হয়েছিল, তার অনেক কিছুতেই ঐকমত্য হল না, তবে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে একটি চুক্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শেষ হল বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬।

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে কার্বন গ্যাসের নির্গমন যতটা কমানো দরকার, ততটা প্রতিশ্রুতি এবারের সম্মেলনে আসেনি। জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় বা জলবায়ুর ক্ষতি পোষাতে অর্থায়নের দাবিতেও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কোনো প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়নি।

তবে সম্মেলনের সূচি পেরিয়ে আরও একদিন স্নায়ুক্ষয়ী দর কষাকষি শেষে যে চুক্তি হল, তাকে ‘একেবারেই কোনো ঐকমত্য না হওয়ার চেয়ে ভালো’ বলে মনে করছে দেশগুলো। তাতে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে ধরিত্রীকে বাঁচানোর বাস্তবসম্মত সুযোগ তৈরির আশাটা অন্তত জিইয়ে রাখা গেল।

শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে খসড়া চুক্তি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি না হওয়ায় বর্ধিত আলোচনা শেষে শনিবার সন্ধ্যার পর ‘গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি’ সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়। খসড়া চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ভারত। কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রস্তাবে কয়লার ওপর অতিনির্ভর দেশটি। তার সঙ্গে আপত্তি জানিয়েছিল চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও ইরানও।

তবে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত অধিবেশনে ভারত খসড়া চুক্তিতে অব্যাহত কয়লা শক্তি ‘পর্যায়ক্রমে শূণ্যে নামিয়ে আনা’র বদলে ‘পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা’ শব্দগুচ্ছ প্রস্তাব করে।

এ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হতাশা প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়।

এর আগে দুই সপ্তাহের ক্লান্তিকর আলোচনা শেষে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফলাফল না আসায় সময় বাড়িয়ে শনিবারের মধ্যে চুক্তি হওয়ার আশা প্রকাশ করেন কপ-২৬ প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্যের অলোক শর্মা।

সেই আশা সত্যি করতে শনিবার রাতে বড় একটি নোটবুক হাতে নিয়ে তাকে সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।

তবে এবারের সম্মেলনের এই চুক্তির সাফল্য যে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, বিশ্বকে বাঁচাতে এখন দরকার জরুরি পদক্ষেপ।

রয়টার্স বলছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, সম্মেলনের আয়োজক ব্রিটেনের তোলা প্রস্তাব তার কাছাকাছিও যেতে পারেনি।

শনিবার সকালে চুক্তির যে খসড়া সবার হাতে হাতে দেওয়া হয়েছে, তাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণ হ্রাসে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ‘যথেষ্টর অনেক কম’ বলে স্বীকারও করা হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যে চুক্তি হয়েছে, তাকে ‘রাজনৈতিক আপস’ আখ্যায়িত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। পাঁচ বছরের জন্য অপেক্ষা না করে সামনের বছরই আরও ‘কঠোর’ জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সেখানে।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া ছোটো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর প্রধান দাবি মেনে ২০১৯ সালের পর্যায় থেকে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ২০২৫ সালের মধ্যে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে চুক্তিতে।

যুক্তরাজ্য বলেছে, ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক জলবায়ু তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। আগামী বছর জাতিসংঘ কমিটির অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া উচিত ।

সেই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ২০২২, ২০২৪ ও ২০২৬ সালে সরকারগুলো মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানে উপর জোর দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

জাতিসংঘ বলছে, বছরে ওই ১০০ কোটি ডলারও গরিব দেশগুলোর প্রকৃত চাহিদা চেয়ে অনেক কম। কারণ, শুধু অভিযোজনের ব্যয় হিসাব করলে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এছাড়া ফসলের ক্ষতি বা জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগ থেকে যে আর্থিক ক্ষতি তারতো হিসাবই করা হয়নি।