১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন আহমেদ৷ তার ডাক নাম ছিল কাজল৷ বাবার রাখা প্রথম নাম শামসুর রহমান হলেও পরে তার বাবা ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ৷
বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে৷ হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তার রচিত ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলি’র মতো অনবদ্য চরিত্র। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনো একইভাবে জনপ্রিয়।
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, সর্বশেষ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের এই রাজা।
রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ৷ তাঁর সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’৷ তাঁর লেখা গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে৷
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি৷ এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক৷
জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’৷
২০১২ সালের ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানেই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে হিমু পরিবহনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শহীদ মুনীর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচিত্র ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’ এর প্রদর্শন। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে আড্ডা ও আড্ডা শেষে হুমায়ূন আহমেদের গান।