পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে ফাঁসি নয়: আপিল বিভাগ

পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড যাতে কার্যকর করা না হয়, সেজন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া চলছে বলে তার আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এই নির্দেশনা দেন।

গত সপ্তাহে এক আইনজীবীর বরাত দিয়ে কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে চার বছর আগে।

এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ওই খবর ‘সঠিক নয়’। ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি।

রোববার আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন একটি মামলার কথা উল্লেখ করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “হ্যাংগিংয়ের (ফাঁসি) মামলা নিয়ে কত সমালোচনা হচ্ছে! ২০০৬ সালের মামলা শুনতে লিস্টে নিয়ে এসেছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মামলাগুলোর পর ২০১৫ সালেরগুলো প্রায় শেষ করেছিলাম। এখন দেখা যায়, ২০১৩ সালের কিছু বাকি রয়েছে।”

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা তখন আদালতকে বলেন, তার মক্কেলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“অ্যাডভান্স অর্ডারের কারণে তাকে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বের হয়নি। রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা হবে, তার আগে ফাঁসি যাতে না দেওয়া হয় সেজন্য আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

গত ১৬ অগাস্ট ওই রায় দেওয়া হয় জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, সেখানে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন এবং একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।

প্রধান বিচারপতি এ সময় জানতে চান, আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করেছে কি না।

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা তখন বলেন, “ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনো রায়ে সই হয়নি।”

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তখন বলেন, যাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স অর্ডার দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের কারাগারে কনডেম সেল থেকে সাধারণ কারা কক্ষে নেওয়া হয়। আপিল বিভাগের ওই রায়ে এখনো সই হয়নি।

আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, “অথচ আদেশ কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে গেছে। সেখান থেকে দণ্ড কার্যকর করতে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।“

প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে তো হবে (দণ্ড কার্যকর) না।”

পরে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে বলেন, “আপনি আইজি প্রিজন্সকে বলবেন পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়।”

সেই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীকে চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন (রিভিউ আবেদনের জন্য) জমা দিতে বলেন প্রধান বিচারপতি।

এ পর্যায়ে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, “সাধারণভাবে একটি কথা বলে দিতে পারেন আইজি প্রিজন্সকে। সবার চূড়ান্ত স্বাক্ষরের আগে রায় পূর্ণাঙ্গ হয় না।”

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “সচিবকে বলছি, উনাকেও বলে দেব।”

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ২০০৪ সালের মার্চ মাসে এ মামলা দায়ের করা হয়। বিচার শেষে ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

পাঁচ আসামি হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের খয়ের আলীর ছেলে শুকুর আলী, আব্দুল গনির ছেলে কামু ওরফে কামরুল, পিজাব উদ্দিনের ছেলে নুরুদ্দিন সেন্টু, আবু তালেবের ছেলে আজানুর রহমান ও সিরাজুল প্রামাণিকের ছেলে মামুন হোসেন।

ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাই কোর্ট আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। গত বুধবার আপিল বিভাগ শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়।

আর অন্য তিন আসামি নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।