৫০তম জাতীয় সমবায় দিবস আজ

৫০তম জাতীয় সমবায় দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে— ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’। দেশব্যাপী সমবায় সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং সমবায় আন্দোলনে গতিশীলতা আনতে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার দিবসটি উদযাপন করা হয়।

এ বছরও যথাযোগ্য মর্যাদায় সমবায় দিবস পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ‘সমবায় পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হবে। এছাড়া দেশব্যাপী জেলা-উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হবে।

এবার ১০টি খাতে ১০টি সমবায়ী সংগঠন ও ব্যক্তিকে ‘জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২০’ প্রদান করা হচ্ছে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা হচ্ছে— কৃষিভিত্তিক/সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায়-কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের ‘দিদার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’, সঞ্চয় ও ঋণদান/ক্রেডিট সমবায় সমিতি-চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রামের দি বুড্ডিস্ট কো-অপারেটিব ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের সভাপতি ভদস্ত শাসন রক্ষিত ভিক্ষু, দুগ্ধ সমবায়-সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মহিলা সমবায়-ঢাকার নুরেরচালার বারিধারা মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেড।

এছাড়া মৎস্য সমবায়-খুলনার ডুমুরিয়া ‍উপজেলার থুকড়া গ্রামের জনতা আদর্শ গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, মুক্তিযোদ্ধা সমবায় ঢাকার মিরপুরের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগাঁ খাঁন মিন্টু, মিরপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, বিত্তহীন,ভূমিহীন সমবায় ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কাজিয়াকান্দা ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিমিটেড, যুব, বিশেষ শ্রেণি, তাঁতিসহ অন্যান্য পেশাভিত্তিক সমবায়-গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং কর্মকর্তা, কর্মচারী, পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী সমবায়-চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (চক্রোসা)।

সম্প্রতি সমবায় অধিদফতর থেকে তাদের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে সংসদীয় কমিটিতে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সমবায় সমিতির ৩০ শতাংশই অকার্যকর। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ সমিতির মধ্যে প্রায় অর্ধেক অকার্যকর না হলেও কার্যক্রমের পরিধি তেমন বিস্তৃত নয়। ফলে অবদান দৃশ্যমান নয়। প্রতিবেদনে সমবায় খাতের সমস্যা হিসেবে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা অনুযায়ী জনবল স্বল্পতা ও সমিতি ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানীয় প্রভাবের কথা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশির দশকে কৃষি সমবায় সমিতিগুলো খুবই কার্যকর থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় নিষ্ক্রীয় অবস্থায় আছে। এছাড়া অন্যান্য সমিতির অবস্থাও একই ধরনের। তবে, মৎস্য সমবায় সমিতি, দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিডেট-সহ কিছু সক্রিয় সমিতিও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৩১৬টি। এসব সমবায় সমিতির সদস্য রয়েছেন এক কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার ৫১৪ জন। সমবায় সমিতির মূলধন ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সমিতির ভৌত সম্পদ রয়েছে তিন হাজার ৯০৮ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। বিনিয়োগকৃত সম্পদ এক হাজার ৭৫৫ কোটি ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। মজুত তহবিল এক হাজার ১১৪ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অর্থাৎ সমবায় সমিতিগুলোর সর্বমোট ফান্ড হচ্ছে— ৬ হাজার ৭৭৮ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। বিগত সময়ে সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ১৫১ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।