নিউজ ডেস্ক, সংবাদ সারাবেলা ডট কম
চাঁদপুরসহ দেশের ১০০৭টি ইউনিয়নে আগামী ২৮ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তৃতীয় ধাপে দেশের ১০ পৌরসভা এলাকায় একসঙ্গে ভোটগ্রহণ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা বিলম্বে হলেও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল পর্যায়ের এই নির্বাচনে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। এই নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জোর লবিং করছেন আগ্রহীরা। তারপরও অনেকেই পাচ্ছেন না দলের মনোনয়ন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠেও নামছেন অনেকে। এসব ঘটনায় ওইসব নেতাকর্মীদের আদর্শ ও আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শীর্ষ নেতারা। ঘটছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিস্কারের ঘটনাও।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও আদর্শিক রাজনীতি প্রসঙ্গে দৈনিক সংবাদ সারাবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও দৈনিক সংবাদ সারাবেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন বিশেষ প্রতিনিধি শাহনাজ পারভীন এলিস।
সংবাদ সারাবেলা: তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় প্রতিনিধি মনোনয়ন এবং দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
কাজী মিজান: আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। তাই নির্বাচনে একাধিক নেতা যাতে মাঠে নামতে না পারে সেজন্যই দলীয় মনোনয়নে প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সংবাদ সারাবেলা: তৃতীয় দফায় চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নেও ভোট হবে। আপনার উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে?
কাজী মিজান: প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের মতামত ও সমর্থনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দলের জন্য নিবেদিত ও আস্থাভাজনদের দলের নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সারাবেলা: মতলবে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কতজন?
কাজী মিজান: উপজেলায় আগ্রহী প্রার্থী ছিলেন শতাধিক। আঠারো ইউনিয়নে দল মনোনীত করেছে ১৮ জনকে। নির্বাচন একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া। এতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিযোগিতার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সবার আস্থা রাখা ও সম্মান জানানো উচিত। দল মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সবাইকে একসঙ্গে মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সারাবেলা: ইউপি নির্বাচনে দলের প্রতীক না পাওয়ায় অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাইওে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এসকল বিদ্রোহী ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?
কাজী মিজান: আমি মনে করি শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নয়, যে কোন নির্বাচনে দল এবং নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের আদর্শের পরিপন্থী, দলের গোপন শত্রু। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেও তারা ধারণ করে না। তারা আসলে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট, দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ছদ্মবেশী সুবিধাবাদী লোক।
সংবাদ সারাবেলা: আপনি নিজেও মতলবের মোহনপুর ইউনিয়নে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু দল মনোনয়ন দিয়েছে অন্য নেতাকে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
কাজী মিজান: দলের সমর্থন পেলে নৌকার পক্ষে থাকবো আর না পেলে থাকবো না এটা হতে পারে না। আমি এবার মনোনয়ন পাইনি তো কি হয়েছে? দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রতি আস্থাশীল। তাই মোহনপুর ইউনিয়নে দল যাকে মনোনীত করেছে আমি তার জন্যই মাঠে আছি এবং থাকবো। আমার নেতাকর্মীরাও তার পক্ষেই কাজ করছেন। নৌকার বিপক্ষে অবস্থানকারীরা আওয়ামী লীগের আদর্শের প্রতি অনুগত নয় বলে মনে করি।
সংবাদ সারাবেলা: সম্প্রতি শরীয়তপুরে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় ১০ জনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনার উপজেলা মতলবে কি অবস্থা?
কাজী মিজান: শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। মনোনয়ন না পেলে কেউ কেউ বিদ্রোহী হওয়ার চিন্তা করছেন। তাদের দ্রুত মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর সেটা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মতলবের ক্ষেত্রেও সেটাই হবে।
সংবাদ সারাবেলা: বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী করতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ?
কাজী মিজান: স্থানীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, দলের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা উচিত।
সংবাদ সারাবেলা: দল থেকে বহিস্কারে স্থানীয় রাজনীতিতে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে কি আপনি মনে করেন?
কাজী মিজান: কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নেয়, দল যদি তাকে বহিস্কার করে রাজনীতিতে তার কোন প্রভাব পড়ে না। বরং শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যারা একমত নন, যাদের আস্থা নেই তাদের বাদ দিলে দল আরও শক্তিশালী হবে। বহিস্কারের কারণে অন্যরাও দলীয় আদর্শের প্রতি আস্থাশীল হবেন।
এর আগে প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ২০৪টি ইউনিয়নে ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়নে ভোট হবে আগামী ১১ নভেম্বর। আর তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়নে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত ৯ বার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ইউপি নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে।
চলতি ২০২১ সালে জুন-জুলাই মাসে শুরু হয় দশম ইউপি নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে নবম ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে চার হাজার ২৭৫টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে। বাকি ২১টি ইউনিয়নে নির্বাচন আটকে রয়েছে মামলা জটিলতায়।