২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূণ্যে নেমে আসবে বলে অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে এই অঙ্গীকার করেন তিনি। আজ এক প্রতিদেনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নেমে আসবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অঙ্গীকার করলেও এটি আসলে কপ-২৬ সম্মেলনের মূল একটি লক্ষ্যমাত্রার বিরোধী। কারণ জলবায়ু সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপচয় না করে আমাদের উচিত সুচিন্তিত ভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।’ ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণের মাত্রা পুরোপুরি কমিয়ে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি সম্মেলনে মোট পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি। এই পাঁচটি প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বের কাছে ভারতের উপহার বলেও উল্লেখ তিনি। পাঁচটি প্রতিশ্রুতি হচ্ছে-
১. ২০৩০ সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম শক্তির উৎপাদন বাড়িয়ে ৫০০ গিগাওয়াট করবে ভারত।২. ওই একই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশই পূরণ করা হবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির মাধ্যমে।
৩. চলতি বছর থেকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত যে পরিমাণ কার্বন দূষণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তার থেকে ১০০ কোটি টন কম কার্বন নিঃসরণ করবে।
৪. ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কম করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ভারত।
৫. সর্বশেষে, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে ভারত।
এদিকে, ভারত শূন্য কার্বন নিঃসরণের জন্য ২০৭০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও চীন ২০৬০ সালের মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কথা জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে।
মূলত গাছ লাগিয়ে, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে বাতাস থেকে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলোকে সম্পূর্ণ রূপে মুছে দেওয়াকেই শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা বলা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে দেশটির কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন।
মোদি বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই বিদ্যুতের পঞ্চাশ শতাংশ চাহিদাই পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলবে ভারত। ২০৩০ সালের মধ্যেই ভারতের কার্বন নিঃসরণ আরও এক বিলিয়ন টন কমিয়ে ফেলার দাবিও করেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যেই গোটা পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্য করে ফেলা উচিত। তা না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক দিকগুলো থেকে কেউ বাঁচবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত জীবাশ্ম বিহীন শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ ৫০০ গিগাওয়াটে নিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন মোদি।
গ্লাসগোর আগে ইতালির রোমে জি-২০ সম্মেলনে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা হ্রাস করার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোটভুক্ত দেশের নেতারা। তার মধ্যে রয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষ্যপূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে ৫০ শতাংশ। পাশাপাশি, ২০৫০ সালের মধ্যে তা পুরোপুরি কমিয়ে ফেলতে হবে।