গোলাম মোস্তফা: স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২৬তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন (কপ ২৬)। পৃথিবীর প্রায় ১২০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখানে এক হয়েছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা, জলবায়ু তহবিলের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সহযোগিতা বাড়ানোর তিনটি প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘের এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশও। ১ ও ২ নভেম্বর সম্মেলনের শীর্ষ বৈঠকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বক্তব্য দেবেন সম্মেলন শুরুর প্রথম দিনেই। ৪৮ দেশের জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের’ (সিভিএফ) চেয়ারপারসন হিসেবেও তিনি সেখানে ভূমিকা রাখবেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কনট্রিবিউশনস’ (এনডিসি) ঠিক করা, ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় সম্মেলনে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে পৃথিবীর আলোচিত এবং সংকটময় বিষয়গুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম প্রধান। যুক্তরাজ্যে দাবদাহ, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থেকে মস্কোয় তুষারপাতের অনুপস্থিতি অথবা চীন ও জার্মানিতে ব্যাপক বন্যা– প্রতিদিনের এসব সংবাদ শিরোনাম আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ আজ আগের থেকে অনেক শক্তিশালী। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীব্যাপী বাড়ছে তাপমাত্রা। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে বিপদসীমা অতিক্রম করছে সমুদ্র ও নদীর পানির উচ্চতা। তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ফলে বসতবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ।
পৃথিবীতে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমে বছরে ৫১ বিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়। এই গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা নগণ্য, মাত্র শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তের দিক থেকে বাংলাদেশ সামনের কাতারে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে, ৩০ মিলিয়ন মানুষ বাড়িঘর ছাড়া হবে। একসময় দেশে বড় বা নিয়মিত বন্যার সময় মানুষের জানা ছিল। জলবায়ুর রূপান্তরে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হুটহাট বন্যায় জীবনজীবিকা, কৃষিসহ নদীভাঙনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে মারাত্মক। বাংলাদেশে ভূমির উচ্চতা কম হওয়ায় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় উপকূলে লবণাক্ততার বিস্তারে জনজীবন আজ দুর্বিষহ। একদিকে সুপেয় পানির অভাব; অন্যদিকে বিভিন্ন রোগবালাইয়ের প্রকোপ। লবণাক্ততা বাড়লে কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি যে প্রভাব পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কিছু নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব, আর কিছু ক্ষেত্রে দরকার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার সর্বোচ্চ দায় উন্নত রাষ্ট্রগুলোর। ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকলে মাত্র কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলে সেই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বাকিরাও লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়। পরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১ সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ২০০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করে। প্যারিস চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো হলো– বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখা। গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধে প্রত্যেকটি দেশের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল থেকে সহায়তা করা।
বিপজ্জনক জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে অবশ্যই প্যারিস চুক্তিকে কার্যকর করতে হবে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় ফিরে ২০৩৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ খাতকে দূষণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ৪০ নেতাকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার এই প্রতিশ্রুতির কথা পোক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ সিভিএফের সভাপতি হওয়ার ফলে তার প্রতি প্রত্যাশা কেবল বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়; বরং সিভিএফ সদস্যভুক্ত ৪৮টি দেশের ১২০ কোটি জনগণের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ভবিষ্যৎ জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পৃথিবীর স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নেতৃত্ব দেওয়া শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ইতিপূর্বেও স্পষ্টত জানান দিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির দায় উন্নত রাষ্ট্রগুলো এড়াতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে জলবায়ুবিষয়ক সর্বোচ্চ বিশ্ব ফোরাম জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ, ২০১৫-তে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে জলবায়ুসংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় এক ভিডিওবার্তায় শেখ হাসিনা পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য পাঁচ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তার প্রথম প্রস্তাব, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবী এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অবশ্যই জোরালো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উৎসাহিত করার পরামর্শ দেব। দ্বিতীয় প্রস্তাব, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং সমস্ত প্যারিস প্রবিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। তার তৃতীয় প্রস্তাব, দুর্বল দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত তহবিল সরবরাহ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাব, দূষণকারী দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রশমন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের এনডিসি বাড়াতে হবে এবং তার পঞ্চম প্রস্তাব, জলবায়ু শরণার্থীদের পুনর্বাসন একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
প্যারিস চুক্তির পাঁচ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন। জলবায়ু পরিবর্তন সংবেদনশীল ও অভিযোজন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন সংবেদনশীল প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি ডলার এবং অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী ১ কোটি ১৫ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে এবং সুরক্ষিত টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সম্পদের জোগান দিতে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ নামে একটি কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি ও অভিযোজন উচ্চাভিলাষ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে, প্রশমন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান বিদ্যুৎ, শিল্প ও পরিবহন খাতসহ কয়েকটি সম্ভাব্য খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাও চূড়ান্ত।
আমরা গ্রেটা থুনবার্গ কিংবা বাংলাদেশ কোস্টাল ইয়ুথ অ্যাকশন হাবের লোকজনের জন্য কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি? আমরা জলবায়ু তহবিল উন্মুক্ত দেখতে চাই। আর তা কেবল কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জন্য নয়, বরং অঙ্গীকার করা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড় এবং এর ৫০ শতাংশ জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির জন্য ব্যয় করা হোক। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর ক্ষেত্রে প্রায়ই ‘গ্রাউন্ড জিরো’ হিসেবে উল্লিখিত হয়। এখানে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের কোটি কোটি সাহসী ও সহিষ্ণু জনগণের অস্তিত্বের লড়াই। যাদের বাড়িঘর, জমি ও শস্য প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক ক্রোধে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। প্রতিবছর জিডিপির ২ শতাংশ বিরূপ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করতে হচ্ছে, যা শতাব্দী শেষে ৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় ১৭ শতাংশেরও বেশি এলাকা পানির নিচে তলিয়ে তিন কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল্য দিয়ে এই দেশ এখনও মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানের যে চাপ বহন করছে, এই ক্ষয়ক্ষতির মূল্য কে দেবে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে নিজস্ব অর্থায়নে গঠন করে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’। বিশ্বের কোনো দেশের নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের ফান্ড গঠনের কোনো নজির নেই। পাশাপাশি বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটিও বিশ্বে প্রথম। প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন ২০১০’সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ)’ গঠন করা হয়েছে। এমনকি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ রাখা হয়েছে। এভাবেই জলবায়ুজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরো বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।
জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ শীর্ষক শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার আলোকে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞদের যৌথ সহায়তায় ২০১৮ সালে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনাটি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সহায়ক হবে। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ের যোগসূত্র সৃষ্টি করবে বলে নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন।
জলবায়ু নিয়ে রাজনীতি কম হচ্ছে না। চলছে চরম দরকষাকষি। একপক্ষ উন্নত দেশগুলো; অন্যপক্ষ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। একজনের বেঁচে থাকার প্রশ্ন; আর অন্যজনের বিলাসিতা। একপক্ষের উন্নত থেকে উন্নততর হওয়া; অন্যপক্ষের পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াই।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির বিষয়ে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির প্রস্তাবক এবং বিপর্যয় কমাতে উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার ওপর চাপ প্রয়োগের মুখপাত্র এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং কূটনৈতিক সফলতার অভিজ্ঞতা দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বনেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীসহ মানবজাতির অধিকার নিশ্চিত করতে সফল হলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী আমরা পেতে পারি। তাই ধরিত্রী সুশীতল রাখতে বিশ্বনেতাদের মানবিকবোধ জাগ্রত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। নইলে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে মহাকালের অসীম গহ্বরে।
লেখক : সাংবাদিক