গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২৮ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম

নিউজ ডেস্ক, সংবাদ সারাবেলা ডট কম

অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের পৃথক তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব কোম্পানির লেনদেনের হিসাবও হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির সমন্বয়ক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১৫ সদস্যের ওই কমিটি দ্বিতীয় সভা হয়। সভা শেষে সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পৃথক তালিকা পেয়েছে কমিটি। একটি তালিকায় ১৯টি, আরেকটিতে ১৭টি এবং অন্যটিতে ১৩টি কোম্পানির নাম রয়েছে।

তবে সর্বোচ্চ সংখ্যাটি ১৯ এর চেয়েও বেশি। কারণ ১৭ ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকার মধ্যে কমন রয়েছে আটটি। এগুলো সমন্বয় করে ফিন্যান্সিয়ল ইন্টিলিজিন্স ইউনিটের কাছে দেওয়া হবে। তারা এই তালিকা ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ নেবে।

আগামী ৯ নভেম্বর কমিটির আরেকটি বৈঠক হবে জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, সেই মিটিংয়ে এই তালিকার কোম্পানিগুলোর আর্থিক লেনদেনের হিসাব উত্থাপন করা হবে। মিটিংয়ে তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করব।

বৈঠকে ইউবিআইডি (ইউনিক বিজনেস আইডিন্টিফিকেশন ) ও এসক্রো সার্ভিস অটোমেশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান কমিটির সমন্বয়ক।

তিনি বলেন, এটুআইকে কিছু বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা হচ্ছে ইউনিক বিজনেস আইডি। একটা কমিটি এটা ফাইনাল করেছে। প্রাথমিক অনুমোদনও পেয়েছে এই মডেলটি। অ্যানালগ ফরমেট থেকে এটুআই এটাকে ডিজিটাল ফরমেটে করে দেবে।

খুব দ্রুতই ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করা হবে। যারা ই-কমার্সে বিজনেস করবে, তাদেরকে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কাজটি হবে অনলাইনে। আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে খুব সহজ করেছি। যাতে করে ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করতে গিয়ে কোনো ব্যবসা মুখ থুবড়ে না পড়ে।

এসক্রো সার্ভিস অটোমেশন করার জন্যও এটুআই থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথা জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, এ কাজের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।

গোয়েন্দাদের ফাইলে কোন কোন ই কমার্স কোম্পানির নাম আছে তা প্রকাশ করেনি মন্ত্রণালয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থার অনুমেদান পেলে এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা গ্রাহকদের ২১৪ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে বলে বৈঠক থেকে জানান হয়।

সফিকুজ্জামান বলেন, “এটা সিআইডি ফ্রিজ করে রেখেছে। তাদের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই টাকা বিতরণ শুরু করা যাবে। এখানে হয়ত সার্ভিস চার্জ বাবদ ১ শতাংশ টাকা কাটা হতে পারে। টাকাটা যেহেতু অনলাইনে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটা অনলাইনেই ফেরত যাবে।”

দেশে ই কমার্সের ব্যবসা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল, এর মধ্যে মহামারী শুরু হলে নতুন নতুন বেশ কিছু কোম্পানি রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে।

বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব কোম্পানি লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে এখন।

অনেকে অর্ধেক দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য না পাওয়া গ্রাহকরা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়।

এ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স খাতের সংস্কার ও সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের সুরক্ষায় গত ১২ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি করে সরকার।

সফিকুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সাতটি বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়।

সফিকুজ্জামান বলেন, কোন কোম্পানির অনিয়ম কতটা, বিএফআইইউর প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা সে বিষয়ে বলতে পারবেন।

বিএফআইইউর জেনারেল ম্যানেজার শওকতুল আলম বলেন, “সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কিছু ক্রাইটেরিয়া দেওয়া আছে। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা মনিটরিং করে। তারা কোনো আনইউজুয়াল ট্রানজেকশন দেখলে বিএফআইইউকে রিপোর্ট করে। পরে আমরা আরও তথ্য যাচাই করে সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিই।

এছাড়া পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনও গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করে বিএফআইইউ। কেউ ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করলে সেটাও আমরা বিবেচনায় নিয়ে থাকি।