রঞ্জন মল্লিক: নিলীমা ইব্রাহিমের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি। আলোচনা সভা ও সপ্তাহব্যাপী নাট্য উৎসবের মধ্য দিয়ে তা উদযাপন হচ্ছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির এ আয়োজন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজীবন নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন মহিলা সমিতির সভাপতি। এই সামাজিক সংগঠনটিতে নিলীমা ইব্রাহিম নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইনি অধিকার সুপ্রতিষ্ঠায় নীরলসভাবে কাজ করে গেছেন। পাশাপাশি সমাজে সংস্কৃতি বিকাশে করণীয় কি, তা তিনি নাট্যশালা নির্মাণ করে সমাজকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি কেন আমাদের সমাজে আজ জরুরি, কেন তাঁকে স্মরণ করা হবে, কেন তাঁকে জানতে হবে? এ সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রজন্মকে জানানো মনে হয় অতীব জরুরি।
১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন নীলিমা রায় চৌধুরী। পিতা ছিলেন প্রফুল্ল কুমার রায় চৌধুরী আর মাতা কুসুম কুমার দেবী। পিতা খুলনার বিশিষ্ট উকিল ছিলেন। পূর্ব-পুরুষ জমিদার বংশের ছিলেন।
নীলিমা রায় চৌধুরীর বাল্য কিংবা শিক্ষা জীবন দারুণ গৌরবোজ্জল। ১৯৩৫ সালে চারটি বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে ম্যাট্টিক পাশ করেন। বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। তীক্ষ্ম মেধার অধিকারী সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক উক্ত বিষয়ে ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৪৫ সালে ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে বিবাহ করেন। অতপর তিনি নীলিমা ইব্রাহিম নামেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন। পারিবারিক জীবনে তিনি পাঁচ কন্যা সন্তানের জননী।
নীলিমা ইব্রাহীমকে কিভাবে মূল্যায়ন করবো, বিষয়টি খুবই জটিল। কারণ তার কর্মের ব্যাপ্তি বিশাল। পার্থিব জীবনের যেদিকে দৃষ্টিপাত যায়, সেদিকেই তিনি উজ্জ্বল তারার মতো দেদীপ্যমান। শিক্ষায়, সাহিত্যে, সমাজ সেবায়, অর্থনীতি চিন্তায়, রাজনীতির বাস্তবতায় এবং নারীর সঠিক পরিচয় নির্ণয়ে তার আছে নিরলস সাধনা।
ষাটের দশকটি ছিল বাংলাদেশের (তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক কাল। এ সময় থেকেই বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় পাকিস্তানি শাসন- শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করে। সেই সময়টিতেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে নীলিমা ইব্রাহিমের আগমন ঘটে। ১৯৫৬ সালে প্রভাষক পদে বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। তারপর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নানাবিধ সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ষাটের দশকের শুরু থেকেই বেশ কিছু উপন্যাস যেমন: বিশ শতকের মেয়ে, একপথ দুইবাঁক, কেয়াবন সঞ্চারিণী প্রকাশিত হয়। তাছাড়া নীলিমা ইব্রাহিমের বেশ কিছু প্রবন্ধ এ সময় সাহিত্যিক সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি করে। শরৎ প্রতিভা, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, বাংলার কবি মধুসূদন এবং তাঁর গবেষণাধর্মী বই উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি সমাজ ও বাংলা নাটক সুধী মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি শক্তিশালী লেখিকা হিসেবে নিজের আসনটি পোক্ত করেন। এসব উপন্যাস ও প্রবন্ধে তিনি সমাজ সচেতনা কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে নারীদের মনের কথা বলার চেষ্টা করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্বাবলম্বী হবার দৃষ্টিভঙ্গীর কথাই যেন তার গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ছিল। তিনি বাঙালি নারীকে দেখতে চেয়েছেন, নারীরাও মাথা উচু করে হেঁটে চলবে। মেরুদণ্ড- যেন বাঁকা না হয়।
যে নারী উপার্জন করে পুরুষ তাঁকে অবজ্ঞা করতে শতবার চিন্তা করে, এ কথাটি তিনি বিভিন্ন ভাবে প্রবন্ধ ও উপন্যাসে উপস্থাপন করে পাঠকের চিন্তাকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করেন। নারীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, তার স্বাধীন সত্ত্বার উন্মোচন এবং সমাজে নারীর যথাযোগ্য স্থান নির্ণয়ের প্রয়াস পেয়েছেন তিনি। তবে তিনি নারীবাদী লেখিকা নন। সমাজে অসম বিকাশের জন্য নারী মুক্তির ক্ষেত্রে যে অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে তা ভেঙে নারী পুরুষের সুস্থ্য, স্বাভাবিক ও আত্ম-সস্মান সম্পন্ন জীবন লাভই তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। সেদিক থেকে তিনি এক মানবতাবাদী লেখক। বিশ শতকের মেয়ে, কেয়াবন সঞ্চারিণী প্রভৃতি উপন্যাসে তিনি নারীকে স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস নারী পুরুষের মিলিত প্রয়াসেই মানবমুক্তি সম্ভব।
তিনি রাজনৈতিক সচেতন শিক্ষক ছিলেন। তাই পাকিস্তান সামরিক সরকারের বাঙালি দলননীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বারবার। ১৯৬১ সালে কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকী পালনকে পূর্ব পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৪ দাঙ্গায় নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং আধুনিক বাঙালি জাতীয়তা চেতনায় একদল নতুন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী তৈরির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বাংলা বিভাগের সেই আদর্শবাদী, বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের ব্রতী, অঙ্গীকার দীপ্ত অধ্যাপিকা নীলিমা ইব্রাহিম বিপুল ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নীলিমা ইব্রাহিমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মঞ্জুরা কবীর সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ”বিশ^বিদ্যালয় পাড়ায় থাকার সময় আমাদের বাড়িটা ছিল বহু ছাত্র-ছাত্রীর অস্থায়ী আস্তানা। আজকের বহু নামিদামি নেতারা তখন ছিলেন ছাত্রনেতা। মা ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন মহিলা। সেই উনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা এগারো দফার দিনে মা উদার হস্তে তার ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। ছাত্রছাত্রীরা সারাদিন মিটিং মিছিল সত্ত্বেও ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে চলে আসতো মায়ের কাছে। থাকা খাওয়ার সাথে সাথে মার প্রচণ্ড আশাবাদী মনের স্পর্শে উজ্জীবিত হতো তারা। আমার আজ মনে পড়ে কি চরম স্নেহে মা এসব ছাত্রদের ভালোমন্দের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন।” নীলিমা ইব্রাহিম সাহসী ছিলেন, তাই পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা নজরদারিকে তোয়াক্কা করতেন না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নীলিমা ইব্রাহিম বিশ^বিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে আত্মগোপন করেন। এ সময় আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদটি প্রচারিত হবার কিছুদিন পর জুনের শেষদিকে যুদ্ধের মধ্যে প্রাণের ঝুকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। এ সময় পাকিস্তান সরকারের প্রযোজন ছিল নীলিমা ইব্রাহিমকে বাঁচিয়ে রাখা। তবুও তিনি পাকিস্তানি খানসেনাদের মুখোমুখি হয়েছেন অসংখ্য বার। পাকিস্তানি খানসেনার তার বাড়ি সার্চ করতে এসেছিল। তখন চার মেয়ে ও মেঘনা গুহ ঠাকুরতা ( শহীদ অধ্যাপক জ্যোতিময় গহ ঠাকুরতার মেয়ে) ফুলার রোডের শিক্ষক কোয়ার্টারে ছিলেন। আর্মি ক্যাপ্টেন বাড়ি সার্চ করতে উদ্যত হলে তিনি শান্ত গলায় বলেন বাড়িতে আমার মেয়েরা আছে, কোন পুরুষ মানুষ নেই। কি ভেবে, সেদিন মিলিটারিরা বাড়ি সার্চ না করে চলে যায়। তাছাড়া তাঁকে হেনস্তা করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে তার নামে চিঠিও আসে। নীলিমা ইব্রাহিম এসব ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে নিজের গাড়ি চালিয়ে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করতেন এবং ভাবতেন একদিন দেশ স্বাধীন হবেই।
স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠিত হলে নীলিমা ইব্রাহিম একজন সম্মানীত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। শ্রদ্ধেয় বিচারপতি কে. এম. সোবহানের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিমের এই কাজের বিশাল অভিজ্ঞতার খানিকটা ফসল আমরা পেয়েছি তাঁর অমাল্যগ্রন্থ ‘‘আমি বিরঙ্গনা বলছি” এর মাধ্যমে। এই বইয়ের মাধ্যমে ’৭১ এর যুদ্ধে লাঞ্ছিত বাঙালি নারীর কান্না-দুঃখ- শোকের ইতিহাসই কেবল পাই না, এখানে এক নারীর মানবাধিকার সচেতন শক্তিশালী লেখককে আমরা খুঁজে পাই। আমি বীরঙ্গনা বলছি-এই গ্রন্থের ভূমিকায় লেখিকা শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন : ১৯৭২ সাল যুদ্ধ জয়ের পর যখন পাকিস্তানি বন্দিরা ভারতের উদ্দেশ্যে এ ভূ-খন্ড ত্যাগ করে তখন আমি জানতে পারি প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ জন ধর্ষিতা নারী এ বন্দিদের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করছেন। অবিলম্বে আমি ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার অশোক ডোরা এবং বাংলাদেশ কর্তপক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত মরহুম নুরুল মোমেন খান যাঁকে আমি মিহির নামে জানতাম তাঁদের শরণাপন্ন হই। উভয়েই একান্ত সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে এসব মেয়েদের সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ আমাদের করে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নওসাবা শরাফী, ড. শরীফা খাতুন ও আমি সেনানিবাসে যাই এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা লাভ করি। পরে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থেকে নারকীয় বর্বরতার কাহিনী জানতে পারি। সেই থেকে বীরঙ্গনাদের সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মে। এ ক্ষুদ্র গ্রন্থে সে আগ্রহের খন্ডাংশ মাত্র। তাঁর এই ভূমিকা থেকেই পাঠক বুঝতে সক্ষম পাকিস্তানীরা আমাদের মা- বোনের ইজ্জতের উপর কি বিভৎস্য হামলা চালিয়েছিল। বইটি একটি প্রামান্য দলিল, তাই বইটি সর্বত্র পঠিত হওয়া প্রয়োজন। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার কথা ভুলতে পারি কি?
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে ১৯৭৪ সালে নীলিমা ইব্রাহিম বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। বাংলা একাডেমিতে চলছিল অনিয়ম বিশৃঙ্খলা। দৃঢ় হাতে এইসব অনিয়ম দূর করেছিলেন। মকবুল নামে এক ভন্ড খাদেম বাংলা একাডেমির চত্বর দখল করেছিল। প্রথমে ছিল একটি কবর এবং তার পাশে মাত্র চার শতক জায়গা। মকবুলের হাতের কারসাজিতে তা বেড়ে হয়ে গেল একশত চুয়াল্লিশ শতক। আর একটু চাপ দিলেই আরো জায়গা বেড়ে বাংলা একাডেমিকে গ্রাস করে। প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দৃঢ় হাতে ভন্ড মকবুলকে উচ্ছেদ করতে পেরেছিলেন সেদিন। মকবুলের কাছে পাওয়া গিয়েছিল ১৪২টি চাঁদা আদায়ের বাক্স। শহরের বিভিন্ন স্থানে এবং শহরের বাইরেও এই বাক্সগুলো রক্ষিত ছিল। এর তত্ত্বাবধান করত এক সুসংগঠিত দল। তারা চাঁদার ভাগ নিত এবং বাক্স পাহাড়া দিত। কিন্তু ‘ মকবুলের অবৈধ ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার পর এই বাক্সের তালা আর সে খুলতে পারেনি। পাহারাদরাই সেই বাক্স দখল করে নিয়েছে। বাংলা একাডেমি রাহুমুক্ত হয়েছে। প্রয়োজনে কি কঠিনই না হতে পারতেন তিনি।
১৯৭২ সালে থেকে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মহিলা আবাস চালিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন মহিলা সমিতি মিলনায়তন। সত্যি কথা বলতে কি, তাঁর উৎসাহে এই মিলনায়তন মঞ্চে নিয়মিত নাটক উপস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে তিনি এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও বিরাট অবদান রেখেছিলেন। পরে মহিলা সমিতি ভবনের উপর তলায় একটি সেমিনার কক্ষ চালু করেছেন। যেখানে সৃজনশীল বিষয়ের চর্চার জন্য সেমিনার কক্ষ উন্মুক্ত করে দেন।
নীলিমা ইব্রাহিমকে একবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শেষ দিকে ১৯৯৫ সালে। ‘মাগো আমি কোয্যাবো’ লেখার জন্য সরকার রাষ্ট্র বিরোধী মামলা ঠুকে দিল। নীলিমা ইব্রাহিমের বাসায় পুলিশ খঁজতে গিয়েছিল, পায়নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন, তাই আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে গেলে সেখান থেকে নানা টালবাহনায় প্রত্যাখ্যাত হন। নিন্ম আদালত থেকে জামিন আনয়নের কথা বলা হয়। সেই করুণ ও হৃদয় বিদারক কাহিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীন দেশে একজন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও কলম – সৈনিকের এই অবস্থা। সাংবাদিক কাজী শাহেদ আহমেদও (আজকের কাগজ) আসামী ছিলেন। তিনি বলেন, নীলিমা ইব্রাহিম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আজকের কাগজে লিখে গেছেন। লেখার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি ছিল না। এদেশে সৎ থাকলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তিনিও পড়েছিলেন।
১৮ জুন, ২০০২ সালে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। রেখে যান তাঁর আদর্শ ও কর্ম। ২০২১ সালে তার জন্মের শততম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। নির্ভীক, পরোপকারী, মানবদরদী, সমাজকর্মী, নারীর অধিকার সচেতন অভিভাবক, লেখক ও সর্বোপরি অধ্যাপক হিসেবে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁকে নিয়ে যত আলোচনা হবে ততই সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে- এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কর্মবীর ড. নীলিমা ইব্রাহিমের শততম জন্মবার্ষিকীতে বিনীত শ্রদ্ধায় আমরা স্মরণ করছি তাঁকে।
লেখক: রঞ্জন মল্লিক, সাংবাদিক