‘খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?’ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত, আর সেই হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তার জন্য আপনি কী করতেন?‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বলল, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা যখন পোঁতে, এর আগে তার বক্তব্য কী ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। ভেবেছিল মরেই তো যাব। রাখে আল্লাহ, মারে কে; মারে আল্লাহ, রাখে কে? আমার বেলায় হচ্ছে, রাখে আল্লাহ, মারে কে। তারপরও আবার খালেদা জিয়ার জন্য এত দয়া দেখাতে বলেন? কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় অন্তত একটু লজ্জা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অমানুষ নই। অমানুষ নই দেখেই আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যপার। তারপরও দুর্নীতি করে দেশটাকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। গ্রেনেড হামলায় আমাদের এতজন আহত হন, ২২ জন মারা যান, সংসদে বিষয়টি নিয়ে একদিনও আলোচনা করতে দেয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় অমানবিক যে, তাকেও আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান, এখন সে অসুস্থ, এই আমি বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে; মারে আল্লাহ রাখে কে। সেটিই মনে করে বসে থাকুন। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমার যতটুকু করার আমি করেছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার।’
এ সময় বিশ্বকাপের হতাশাজনক খেলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা দেখে আপনারা এত হতাশ হন কেন? আমি হতাশা দেখতে চাই না। কয়েকটা খেলা তারা চমৎকার খেলেছে।’
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রিকেট খেলেছন কখনো, মাঠে গেছেন কখনো? ব্যাট-বল ধরেছেন? ধরেননি। সেজন্য জানেন না। কথায় কথায় এত হতাশ হওয়া ঠিক নয়। এটা আমাদের একটা রোগের মতো হয়ে গেছে, একটুতেই হতাশ, একটুতেই উৎফুল্ল। মাঝে-মধ্যে ধৈর্য ধরে থাকেন। আগামীতে আরও ভালো করবে তারা।’
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করার আশা নিয়ে দেশ ছাড়লেও সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে টাইগারদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়। এরপর ওমান ও পাপুয়ানিউ গিনিকে হারিয়ে কোনরকমে প্রথম পর্ব পার করে সুপার টুয়েলভের টিকিট পায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। এ পর্বে খুলতে পারেনি জয়ের খাতা। টানা ৫ ম্যাচে হেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত হতে হয় বাংলাদেশকে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, ফলাফল যেটা আমরা আশা করেছিলাম সেটা হয়নি। তবে এজন্য আমি আমাদের ছেলে-পেলেদের নিয়ে কখনো হতাশা প্রকাশ করি না। আমি বলি আরও ভালো খেলো। আরও প্র্যাকটিস করো।’
সফরকালে তিনি কপ-২৬ সম্মেলন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১, ইউনেস্কো সদর দফতরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে গত ১৪ নভেম্বর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সফর নিয়েই আজকের এ সংবাদ সম্মেলন।