নাটোর রানী ভবানী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অফিস শৃংখলা পরিপন্থী আচরণ এবং পদ ব্যবহার করে সহকর্মীদের সাথে অসদচারণের অভিযোগ উঠেছে। প্রিন্সিপাল প্রফেসর মোছাঃ মঞ্জুরা বেগমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো তিনি পারিবারিকভাবে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হলেও এখন মুখোশধারী আওয়ামী লীগার। অথচ কলেজের আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকদের প্রতি প্রিন্সিপালের অসদাচরণ স্পষ্ট। প্রিন্সিপাল প্রফেসর মোছাঃ মঞ্জুরা বেগমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর প্রমাণ দিতে এবং সেমতে প্রতিকারের আশায় একাধিক শিক্ষক একত্র হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গেছেন। একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ:
প্রথমত, ২৫ মার্চ ২০২১ গণহত্যা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কলেজে এনে তাদের মাধ্যমে ছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনানোর নির্দেশনা থাকলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কলেজে আনাকে নিজের জন্য অসম্মানের মনে করেন। তিনি মনে করেন ‘মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন ঠিক আছে, কিন্তু তারা স্টেজে বক্তব্য দেবেন আর তিনি নিচে বসে শুনবেন- তা হবে না।
দ্বিতীয়ত, কলেজে যোগদান করেই তিনি পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর করা কলেজের সকল কমিটি বাতিল করে দেন। এবং অর্থ সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের (জামায়াত ঘরানা) অগ্রাধিকার দেন।
তৃতীয়ত, কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী একই শিক্ষক পরপর দুটি পরীক্ষা/ফরম পূরণ কমিটিতে থাকার বিধান না থাকলেও তিনি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে,সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান আজমেরী সুলতানাকে নিজের ক্ষমতাবলে পরপর দুটি কমিটি প্রদান করেন।
চতুর্থত, কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী অনার্স বিভাগের ফরম পূরণ সংক্রান্ত কমিটিতে নন অনার্স বিভাগের শিক্ষকদের থাকার কোন বিধান না থাকলেও তিনি স্বীয় ক্ষমতাবলে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অনার্স বিভাগের ফরম পূরণ সংক্রান্ত কমিটিতে নন অনার্স বিভাগের শিক্ষকদের অর্ন্তভূক্ত করেন।
পঞ্চমত, ৩৮ তম বিসিএস এর ৬ জন নবীন কর্মকর্তা ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ এ যোগদান করতে আসবেন জেনেও তিনি সেদিন দেরীতে আসেন বিধায় নবীন কর্মকর্তাদের যোগদান সংক্রান্ত কাজ হেড ক্লার্কের রুমে সম্পন্ন হয়। এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের ক্লোজড গ্রুপে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ষষ্ঠত, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার নিতে ( করোনার কারণে) এক শিক্ষার্থীর পরবির্তে তার মা পুরস্কার এলে তাকে ভবিষ্যতে কলেজে আসতে নিষেধ করা হয়। এত তিনি অপমানিত বোধ করেন এবং মর্মাহত হন।
সপ্তমত, ৩০ জুন,২০২১ কলেজের শিক্ষক পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন শিক্ষক পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে মৌখিকভাবে বলা হলে তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ১২/০৯/২০২১ এর পর কলেজে ক্লাশ চালু হলে তাকে মৌখিকভাবে শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন দেবার ব্যাপারে জানানো হয়, তাতেও কাজ না হলে সকল শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষক পরিষদ নির্বাচনের জন্য লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি মিটিং ডেকে জানান, কোন নির্বাচন হবে না। তিনি তার পছন্দের শিক্ষকদের মনোনীত করে পরিষদ গঠন করবেন। তার এ বক্তব্যে সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ একমত পোষন না করায় তিনি শিক্ষক পরিষদ গঠন করবেন না বলে জানান এবং অদ্যাবধি কলেজে কোন শিক্ষ পরিষদ নেই।
অষ্টমত, তিনি কলেজে যোগদান করার পর অনার্স ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ, ৩ য় বর্ষ ফরম পূরণ শেষ হয়েছে কিন্তু তার সম্মানী তিনি বন্টন করেন নাই। একইভাবে মাস্টার্স পরীক্ষা-২০১৮ ও ডিগ্রী পরীক্ষা-২০১৯ শেষ হলেও তার সম্মানীও বন্টন করেন নাই । কারন কলেজের বিদ্যমান নীতিমালা তার পছন্দ নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
নবমত, তিনি কথায় কথায় শিক্ষকদের এসিআর এবং বদলীর ভয় দেখান এবং যে কোন অজুহাতে শো-কজ দেন, শো-কজ এর উত্তর দিলে তিনি তা অফিসিয়ালি রিসিভ করেন না এবং কোন রিসিভ কপি দেন না। এমনকি শো-কজ এর জবাব পছন্দ না হলে তিনি তার কথানুযায়ী লিখে আনার জন্য চাপ দেন।
দশমত, তিনি যোগদান করার পর ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৫ মার্চ, ২৬ মার্চ , ১৫ আগস্ট ও ১৮ অক্টোবরের মত জাতীয় দিবসগুলোতে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেন না।
একাদশতম, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ সর্বোচ্চ একদিনে ২ টা রাখার কথা থাকলেও তিনি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত ৭ টি ক্লাশের ব্যবস্থা করেছেন। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র বিরোধী। সূত্র স্মারক নং-৩৭.০২.০০০০.১০৫.৪৬.০০১.২১.৫০১, তারিখ: ০৮/০৯/২০২১ মাউশি।
দ্বাদশতম, রোজি মোজাম্মেল বেসরকারি কলেজের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হলে,তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের নিকট সেটি দাবী করেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক প্রত্যয়ন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তিনি প্রথমে তাদের আর্থিক সুবিধা দিতে চান, তাতেও শিক্ষকরা রাজী না হলে তিনি তাদের ভবিষ্যতে দেখে নেবার হুমকী দেন।
ত্রয়োদশতম, বিভিন্ন পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির নিকট থেকে তিনি নীতিমালা বহির্ভূভূতভাবে অর্থ দাবী করেন। কমিটির সদস্যরা তার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন কমিটির টাকা বন্টন হয়নি।
এছাড়ও করোনাকালে উচ্চ-মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হোস্টেল চার্জ বাবদ পাঁচ হাজার টাকার অধিক আদায় করা হয়। আদায়কৃত অর্থ হোস্টেলে একদিনও না থাকায় মেয়েদের এর পূর্ণ অংশ বা কিছুটা ফেরত দেয়ার বিষয়ে বারংবার বলা স্বত্ত্বেও ফেরত দেয়া হয়নি।
একদিকে, ৩৮ তম বিসিএস এ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কয়েকজন শিক্ষা জীবনে ভাল ফলাফলের জন্য অগ্রীম বর্ধিত বেতনের আবেদন করলে তিনি বিভিন্ন অযুহাতে দীর্ঘদিন তাদের ফাইল আটকে রাখা এবং একজন বিসএস কর্মকর্তাকে তার সকল পরীক্ষার মূল সনদ নিয়ে আসতে বাধ্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, ২১ অক্টোবর ২০২১ অনার্স ১ম বর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা দুজন ছাত্রী মাকে সন্তানসহ বের করে দেন, এবং একজন মা সন্তানসহ না বের হওয়ায় সভাপতির ভাষণের সময় তিনি তাকে অপমানসূচক কথা বলেন এভং ভবিষ্যতে বাচ্চাসহ কলেজে আসতে নিষেধ করে দেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রিন্সিপাল প্রফেসর মোছাঃ মঞ্জুরা বেগমের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।